আপনি কি কখনও এমন এক মুহূর্তের কথা ভেবেছেন, যখন আপনার আর্তি সরাসরি আরশে আযীমে পৌঁছে যায়? এমন এক আকুতি, যা আল্লাহর রহমতের দরজায় এত জোরে নাড়া দেয় যে তা আর ফিরিয়ে দেওয়া হয় না? প্রতিটি মুমিনের অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা এই তীব্র আকাঙ্ক্ষার নামই হলো ইসমে আজম—আল্লাহর সেই মহান এবং সর্বোচ্চ নাম, যা ধরে দোয়া করলে তিনি সাড়া দেন এবং যা চেয়ে প্রার্থনা করলে তিনি তা দান করেন।
কিন্তু ইসমে আজম কি কোনো জাদুর কাঠি? এটি কি একটি মাত্র শব্দ যা জানলেই জীবনের সব চাওয়া পূরণ হয়ে যাবে? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো আধ্যাত্মিক রহস্য?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিসের vast ocean (বিশাল সাগর) থেকে আলেম ওলামাগণ বছরের পর বছর ধরে এই মহামূল্যবান মুক্তোটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। এই আর্টিকেলটি কোনো সাধারণ তালিকা নয়। এটি একটি গভীর অনুসন্ধান—একটি যাত্রা, যা আপনাকে নিয়ে যাবে হাদিসের পাতা থেকে শুরু করে আলেমদের বিশ্লেষণ পর্যন্ত। আমরা একসাথে জানব, বিভিন্ন হাদিসের আলোকে সম্ভাব্য ইসমে আজম কোনগুলো, কেন এগুলো এত শক্তিশালী, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—কীভাবে এই মহান নামের উসিলায় দোয়া করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। চলুন, সেই আলোকিত পথের সন্ধান শুরু করি।
ইসমে আজম কি? (আল্লাহর মহান নামের রহস্য)
“ইসমে আজম” (الاسم الأعظم) একটি আরবি পরিভাষা, যার আক্ষরিক অর্থ হলো “সর্বশ্রেষ্ঠ নাম” বা “The Greatest Name”। এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সেই গুণবাচক নাম বা নামসমূহ, যার মর্যাদা অন্য সকল নামের চেয়ে বেশি।
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই নামটি এতই বরকতময় এবং শক্তিশালী যে, এর মাধ্যমে যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তখন তিনি তা প্রদান করেন এবং যখন তাকে ডাকা হয়, তখন তিনি সেই ডাকে সাড়া দেন।
কুরআন ও হাদিসে এর ভিত্তি:
যদিও কুরআনে “ইসমে আজম” শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তবে এর ধারণাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাহাবীদেরকে এমন কিছু দোয়ার কথা শিখিয়েছেন, যার মধ্যে ইসমে আজম নিহিত আছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এটি কি একটি মাত্র নির্দিষ্ট নাম?
এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এটি একটি নির্দিষ্ট নাম (যেমন: “আল্লাহ” বা “আল-হাইইয়ুল কাইয়্যুম”), আবার অধিকাংশ আলেমের মতে, এটি কোনো একটি মাত্র নাম নয়, বরং কয়েকটি শক্তিশালী নামের সমন্বয় অথবা বান্দার আন্তরিকতার সেই সর্বোচ্চ স্তর, যখন সে তার রবের মহত্ত্বকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপলব্ধি করে দোয়া করে।
সত্যিকার অর্থে, ইসমে আজমের নির্দিষ্ট পরিচয়টি আল্লাহ তা’আলা গোপন রেখেছেন, যাতে বান্দা শুধু একটি নামের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, তার সকল সুন্দর নাম ধরে তাকে ডাকে এবং তার সাথে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যায়।
বিভিন্ন হাদিসের ভাষায় ইসমে আজম কোনগুলো?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন হাদিসে কয়েকটি দোয়া ও নামের গুচ্ছকে ইসমে আজম হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। শীর্ষস্থানীয় আলেমদের গবেষণা অনুযায়ী, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. “আল-হাইইয়ুল কাইয়্যুম” (ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ): চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী
এই দুটি নামকে ইসমে আজমের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়।
- হাদিসের প্রমাণ: হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “ইসমে আজম এই দুটি সূরার মধ্যে রয়েছে: সূরা আল-বাকারাহ এবং সূরা আলে-ইমরান।” বর্ণনাকারী বলেন, আমি সূরা দুটিতে তা অনুসন্ধান করে ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ পেলাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)।
- সূরা বাকারার আয়াতুল কুরসীতে: ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ
- সূরা আলে-ইমরানের শুরুতে: الٓمٓ (١) ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ
২. হযরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই দোয়াটিকে এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এটি দিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
- হাদিসের প্রমাণ: হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর এমন একটি নাম সম্পর্কে জানাব না, যা ধরে দোয়া করলে তিনি সাড়া দেন?… সেটি হলো ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.)-এর দোয়া… لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبْحَٰنَكَ إِنِّى كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ।” (সুনানে তিরমিযী)
৩. “ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” (يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ): হে মহিমান্বিত ও মহানুভব
এই নামটি ধরে দোয়া করার জন্য রাসূল (ﷺ) বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন।
- হাদিসের প্রমাণ: হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “তোমরা ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’-কে দোয়ার মধ্যে আবশ্যক করে নাও (অর্থাৎ, বারবার বলো)।” (সুনানে তিরমিযী)।
৪. তিনটি হাদিসে বর্ণিত সম্মিলিত দোয়া
একটি দীর্ঘ হাদিসে হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি নামাজের পর একটি বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা শুনে রাসূল (ﷺ) বলেন, “তুমি আল্লাহকে তাঁর ইসমে আজম ধরে ডেকেছ, যা ধরে দোয়া করলে তিনি কবুল করেন।” সেই দোয়াগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত নামগুলো ছিল:
- اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، اَلْمَنَّانُ، بَدِيْعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ
- অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ সকল প্রশংসা আপনারই। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি অসীম অনুগ্রহকারী, আসমান ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা। হে মহিমান্বিত ও মহানুভব, হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)।
এই হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি উপরের অনেকগুলো সম্ভাব্য ইসমে আজমকে (যেমন: আল-হাইইয়ুল কাইয়্যুম, যা-ল জালালি ওয়াল ইকরাম) একত্রিত করেছে।
৫. তাওহীদের চূড়ান্ত ঘোষণা: সূরা ইখলাসের গুণাবলী
- হাদিসের প্রেক্ষাপট: হযরত বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে নামাজের মধ্যে এই দোয়াটি পাঠ করতে শুনলেন। দোয়াটি শোনার পর তিনি বললেন, “ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সেই মহান নাম (ইসমে আজম) ধরে ডেকেছে, যে নামে দোয়া করলে তিনি কবুল করেন এবং যে নামে চাইলে তিনি দান করেন।” (সুনানে তিরমিযী, আবু দাউদ, হাদিসটি সহীহ)
- দোয়াটি হলো:
- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَد
- “আল্লাহুম্মা ইন্নী আস’আলুকা বি-আন্নী আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদ, আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।”
- অনুবাদ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এই বলে প্রার্থনা করছি যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি—আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। আপনি এক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি, এবং তাঁর সমকক্ষ আর কেউই নেই।”
- এর শক্তি: এই দোয়াটি আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদের সবচেয়ে সুন্দর এবং পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা, যা সরাসরি সূরা ইখলাসের মূল বার্তা। এটি আল্লাহর কাছে নিজের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তার একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়ে দোয়া শুরু করার শিক্ষা দেয়।
ইসমে আজম দোয়া কয়টি?
হাদিসগুলোর বিভিন্ন বর্ণনা একত্রিত করলে দেখা যায়, কোনো একক নির্দিষ্ট দোয়াকে “ইসমে আজম দোয়া” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। বরং, কয়েকটি দোয়া ও নামের গুচ্ছের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। উপরে বর্ণিত পাঁচটি প্রধান বর্ণনাকেই ইসমে আজমের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাই, “ইসমে আজম দোয়া কয়টি?”—এর উত্তর সংখ্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই দোয়াগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ এবং আল্লাহর গুণাবলী বোঝা। মূল বিষয় হলো আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহীদ), তাঁর চিরস্থায়ীত্ব, তাঁর মহত্ত্ব এবং তাঁর অসীম করুণার ঘোষণা দিয়ে দোয়া শুরু করা।
ইসমে আজম পড়ার ফজিলত
ইসমে আজমের ফজিলত অপরিসীম, যা হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত।
- দোয়া কবুলিয়াতের নিশ্চয়তা: সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার।
- চাওয়া পূরণের মাধ্যম: যা কিছু চাওয়া হয়, আল্লাহ তা দান করেন। এটি দুনিয়াবী প্রয়োজন (যেমন: রিজিক, স্বাস্থ্য) এবং আখেরাতের প্রয়োজন (যেমন: ক্ষমা, জান্নাত)—উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ: ইসমে আজম পাঠ করার মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহর গুণাবলী এবং মহত্ত্বকে গভীরভাবে স্মরণ করে, যা তাকে আল্লাহর আরও নিকটবর্তী করে তোলে। এটি শুধু একটি চাওয়া-পাওয়ার মাধ্যম নয়, এটি একটি গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ।
বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি: হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, ইসমে আজম কঠিন বিপদ এবং মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একটি পরীক্ষিত উপায়।
ইসমে আজম আমল করার নিয়ম
এটি আর্টিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়োগিক অংশ। শুধু ইসমে আজমের শব্দগুলো জানাই যথেষ্ট নয়; এর সাথে কিছু শর্ত এবং আদবও জড়িত, যা দোয়া কবুলের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
১. ইখলাস বা আন্তরিকতা:
আপনার দোয়া হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। লোক দেখানো বা অন্য কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে নয়।
২. দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াক্বীন):
- আপনাকে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই আপনার দোয়া কবুল করার ক্ষমতা রাখেন। মনে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা নিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হয় না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।” (তিরমিযী)।
৩. হালাল উপার্জন:
- এটি দোয়া কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। যে ব্যক্তির খাদ্য, পানীয় এবং পোশাক হারাম উপার্জন দ্বারা অর্জিত, তার দোয়া কবুল হওয়া অত্যন্ত কঠিন। (সহীহ মুসলিম)।
৪. দোয়ার আদব মেনে চলা:
- দোয়া শুরু করার আগে ওযু করে নিন।
- দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করুন (আলহামদুলিল্লাহ বলুন) এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করুন।
- দোয়া শেষেও দরুদ পাঠ করুন এবং “আমিন” বলুন।
- কেবলামুখী হয়ে, বিনয়ের সাথে এবং কাতর স্বরে দোয়া করুন।
আমল করার একটি বাস্তবসম্মত রুটিন:
- প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করুন।
- আপনার প্রতিটি ফরজ নামাজের পর এবং বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সময় ইসমে আজম সম্বলিত দোয়াগুলো (বিশেষ করে ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ এবং يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ-কে অন্তর্ভুক্ত করে) পাঠ করুন।
- যখনই কোনো কঠিন বিপদ বা দুশ্চিন্তায় পড়বেন, তখন বেশি বেশি করে হযরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়াটি পাঠ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ Section)
প্রশ্ন ২: আমি কীভাবে নিশ্চিত হব যে, আমার দোয়াটি ইসমে আজমের মাধ্যমে করা হয়েছে?
উত্তর: এটি নিশ্চিতভাবে জানার কোনো উপায় নেই। ইসমে আজম কোনো জাদুকরী ফর্মুলা নয়, বরং এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে এক গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগের বিষয়। যখন আপনার দোয়াটি পূর্ণ একনিষ্ঠতা, বিনয়, আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাঁর মহিমা উপলব্ধির সাথে করা হয়, তখন সেই দোয়াই ইসমে আজমের শক্তি লাভ করে। দোয়ার বাহ্যিক শব্দের চেয়ে আপনার অন্তরের অবস্থাই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৩: ইসমে আজম পাঠ করে দোয়া করলে কি তা সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়?
উত্তর: হাদীস অনুযায়ী, ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। তবে "কবুল হওয়া"র অর্থ সবসময় সাথে সাথে চাওয়া জিনিসটি পেয়ে যাওয়া নয়। আল্লাহ তা'আলা তাঁর অসীম জ্ঞান অনুযায়ী দোয়া কবুলের তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটি নির্বাচন করেন: (১) হয় তিনি বান্দার চাওয়া জিনিসটি তাকে দিয়ে দেন, (২) অথবা এর বিনিময়ে তার উপর থেকে কোনো বিপদ সরিয়ে নেন, (৩) অথবা এর প্রতিদান আখিরাতের জন্য জমা রাখেন। তাই পূর্ণ আস্থা রাখুন, আপনার কোনো দোয়াই বৃথা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন ৪: আমি কি অন্যের ক্ষতি করার জন্য ইসমে আজম ব্যবহার করতে পারি?
উত্তর: কক্ষনোই না। ইসলামে অন্যের ক্ষতি করার জন্য বা কোনো হারাম উদ্দেশ্যে দোয়া করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসমে আজম আল্লাহর রহমত এবং করুণা লাভের একটি পবিত্র মাধ্যম। এটিকে কোনো অন্যায় বা হারাম কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করা একটি মারাত্মক গুনাহ এবং এটি আল্লাহর ক্রোধের কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: ইসমে আজম জানার জন্য কি কোনো বিশেষ আমল বা সাধনা করতে হয়?
উত্তর: না, এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সাধনা বা গোপনীয় আমলের প্রয়োজন নেই। ইসমে আজম জানার মূল চাবিকাঠি হলো আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, সেগুলোর অর্থ বোঝা এবং প্রতিনিয়ত দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে গভীর করা। যে বান্দা আল্লাহকে যত বেশি চেনে এবং ভালোবাসে, তার দোয়াই তত বেশি শক্তিশালী হয়।
উপসংহার:
ইসমে আজম কোনো গুপ্তধন বা গোপন সূত্র নয় যা খুঁজে পেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বরং, এটি হলো আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্কের গভীরতার একটি প্রতিফলন। এটি হলো সেই মুহূর্ত, যখন আপনার অন্তর আল্লাহর মহত্ত্ব, দয়া এবং ক্ষমতার উপলব্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
হাদিসে বর্ণিত শব্দগুলো নিঃসন্দেহে বরকতময়, কিন্তু সেই শব্দগুলোর আসল শক্তি তখনই প্রকাশিত হয়, যখন তা একটি আন্তরিক, বিশ্বাসী এবং অনুগত অন্তর থেকে উচ্চারিত হয়।
তাই, শুধু শব্দগুলো মুখস্থ না করে, এর অর্থ নিয়ে ভাবুন। আপনার জীবনকে হারাম থেকে পবিত্র করুন, আল্লাহর প্রতি আপনার বিশ্বাসকে দৃঢ় করুন এবং বিনয়ের সাথে তাঁর কাছে চাইতে থাকুন। যখন আপনার অন্তর প্রস্তুত হবে, তখন আপনার মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি নামই আপনার জন্য “ইসমে আজম” হয়ে উঠতে পারে।
আরোও পড়ুন…….
- ১০টি জীবন বদলে দেওয়া দোয়া যা প্রতিটি ব্যক্তির জানা উচিত
- সময় নষ্ট করছেন? ইসলামে সময় ব্যবস্থাপনার সেরা ৫টি মূলনীতি
- ভয়াবহ কালো জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় – দোয়া, লক্ষণ ও মুক্তির পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা
- দোয়া কবুল হওয়ার আমল: জেনে নিন সহজ ও গোপন রহস্য
🕋 আমাদের পছন্দের কিছু ইসলামিক পণ্য
এই লিঙ্কগুলো থেকে কেনাকাটা করলে সাইটটির সাপোর্ট হয়, আপনার কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
- সুন্দর এবং আরামদায়ক জায়নামাজ: এখানে দেখুন
- খাঁটি এবং অ্যালকোহল-মুক্ত আতর: এখানে দেখুন
- মানসম্মত টুপি/টুপি সেট: এখানে দেখুন
- ডিজিটাল তাসবীহ/গণনা যন্ত্র: এখানে দেখুন